ঢাকার ভূমিকম্প ঝুঁকি কেন বাড়ছে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোর বিশ্লেষণ, ফল্ট লাইন সক্রিয়তার প্রমাণ, বড় ঝাঁকুনির আশঙ্কা এবং প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা জানুন। ৫ বছরে ঢাকার আশেপাশে ৩৯টি ভূমিকম্প ঝুঁকি কতটা?
ঢাকার ভূমিকম্প ঝুঁকি বাড়ছে: বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ ও বাস্তব অবস্থা
সাম্প্রতিক সময়ের ধারাবাহিক ভূমিকম্প ঢাকার বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নিকটতা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, উচ্চ জনঘনত্ব এবং অপ্রস্তুত অবস্থা সব মিলিয়ে রাজধানী এখন গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা।
গত শুক্রবার ও শনিবার ৩১ ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকা ও আশপাশে চারটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হয় নরসিংদীর মাধবদীতে, রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৫.৭। এই ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার যা তীব্র ঝাঁকুনি সৃষ্টি করে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু এবং ৬০০ জনের বেশি আহত হওয়ার ঘটনা ঘটায়।
ঢাকার কাছে সক্রিয় ফল্ট লাইন বড় ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা
ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন
“ফল্ট লাইন দীর্ঘদিনের চাপ মুক্ত করতে শুরু করেছে। আফটারশকগুলো বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত। বড় ভূমিকম্প খুব নিকটে হতে পারে।”
তিনি জানান, সাব-ফল্ট আগেও নড়েছে, তবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এবার তা পরিষ্কার যে, ফল্ট লাইনটি ঢাকার দিকেই এগিয়ে আসছে, যা বড় বিপদের সতর্ক সংকেত।
পাঁচ বছরে ঢাকার কাছে ৩৯টি ভূমিকম্প ঝুঁকির পরিসংখ্যান
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশ্লেষণে দেখা যায়
- ২০২১ থেকে ২০২4 সালের মধ্যে দেশে মোট ভূমিকম্প: ৩৯টি
- এর মধ্যে ১১টি ভূমিকম্প ছিল ঢাকার ৮৬ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে
- অর্থাৎ ২৮% ভূমিকম্পের উৎস ছিল ঢাকার খুব কাছে
- মাত্রা: ৩.৩ থেকে ৫.৭
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল পাওয়া গেছে ১৮ জেলায় ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, কুমিল্লা, দিনাজপুর, পাবনা, রাঙামাটি ইত্যাদি।
মো. মমিনুল ইসলাম, পরিচালক, আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেন
“নরসিংদীতে সাব-ফল্ট বড় আকারে সক্রিয় হচ্ছে। এটি ঢাকার খুব কাছে চলে এসেছে যা বড় ঝুঁকির ইঙ্গিত।”
রাতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি কারণ কী?
বিশ্লেষণে দেখা গেছে:
- রাত ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ভূমিকম্প: ২৩টি
- দিনে ভূমিকম্প: ১৬টি
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, ঘরবন্দী থাকে যার ফলে প্রাণহানি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ঢাকার ভূমিকম্পঝুঁকি বাড়ার চারটি প্রধান কারণ
বুয়েটের অধ্যাপক রাকিব হাসান ঝুঁকির চারটি কারণ উল্লেখ করেন
১. ফল্ট লাইনের নিকটতা
নরসিংদী সাব-ফল্ট ঢাকার দিকে সক্রিয় হয়ে উঠছে।
২. মাটির দুর্বল গঠন
ঢাকার নবনির্মিত অংশে নিচু জায়গায় মাটি ভরাট করে শহর গড়ে উঠেছে। এতে কম্পনের তীব্রতা বেড়ে যায়।
৩. বিল্ডিং কোড না মানা
ঢাকার অনেক বিল্ডিং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও earthquake design code অনুসরণ করে তৈরি হয়নি।
৪. অতিরিক্ত জনঘনত্ব
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভবন ধসে পড়লে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি অনেকগুণ বাড়বে।
প্রস্তুতির ঘাটতি—দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ধীরগতি
২০১৬ সালে ন্যাশনাল অপারেশন সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত হলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি। জায়গা বরাদ্দ থাকলেও নির্মাণসামগ্রী রাখার জায়গা না থাকায় প্রকল্প আটকে আছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে
- উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহ চলছে
- সশস্ত্র বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ওপর নির্ভরতা বেশি
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভূমিকম্প মহড়া ও প্রশিক্ষণ নেই
- জনসচেতনতা এখনো পর্যাপ্ত নয়
দুর্যোগ বিশারদ গওহর নঈম ওয়ারা বলেন
“দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে যুক্ত না করলে কার্যকর প্রস্তুতি অসম্ভব।”
তিনি আরও বলেন
“যখন ছাত্ররা আতঙ্কে বিল্ডিং থেকে লাফ দেয়, তখন বোঝা যায় শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব কতটা।”
ঢাকার জন্য বড় ভূমিকম্প এখন আর দূরের আশঙ্কা নয়
ঢাকায় সক্রিয় ফল্ট লাইন, মাটির দুর্বলতা, বিল্ডিং কোড না মানা, এবং অতিরিক্ত জনঘনত্ব সবকিছু মিলে বড় ভূমিকম্পকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা এখনই প্রস্তুতি জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন নয়তো সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি হবে ভয়াবহ।
➡️ মেডিকেল ভর্তি ও ভর্তি প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত পেতে ভিজিট করুন:
https://www.bebrainer.app/
➡️ সব নোটিশ ও আপডেট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হন:
https://t.me/bebrainernursing