বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল

নার্সিং এমন একটি পেশা যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। এ পেশার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিকভাবে কোন রোগী বা ব্যক্তির স্বাস্থ্য পুণরুদ্ধার এবং জীবনযাত্রার গুরুত্বতা তুলে ধরা হয়। এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত, দক্ষ কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নার্স বা সেবিকা নামে পরিচিত। প্রধানত নারীরাই নার্সিং পেশার সাথে জড়িত থাকেন। তবে এখন অনেক পুুুরুষেও এই পেশার সাথে যুুুুক্ত হচ্ছেন।

ইতিহাস

আধুনিককালে নার্সিং সেবা গড়ে উঠার পূর্বে খ্রীষ্টান যাজিকা বা নান এবং সামরিক বাহিনীতে প্রায়শঃই নার্সিংজাতীয় সেবাকার্য্য পরিচালিত হতো।[১] ধর্মীয় এবং সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত সেবাকার্য্যের বিষয়গুলো বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিপালিত হয়। যুক্তরাজ্যে জ্যেষ্ঠা নারী সেবিকাগণ সিস্টার নামে পরিগণিত হয়ে থাকেন।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধে নার্সিং ইতিহাসে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটেছিল। এতে ইংরেজ নার্স ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলপেশাদারী পর্যায়ে নার্সিংয়ের পরিধি এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও বিশ্লেষণপূর্বক তার প্রণীত নোটস অন নার্সিং গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

পেশাদারী পর্যায়ে এ পেশার মানোন্নয়নে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নার্স ব্যক্তিত্বরূপে ম্যারি সীকোলএগনেস এলিজাবেথ জোন্সএবং লিন্ডা রিচার্ড ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছেন। ম্যারি সীকোল ক্রিমিয়ায় কাজ করেছেন; এগনেস এলিজাবেথ জোন্স ও লিন্ডা রিচার্ডস গুণগত মানসম্পন্ন নার্সিং বিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে প্রতিষ্ঠা করেন। তন্মধ্যে – লিন্ডা রিচার্ডস আমেরিকার প্রথম পেশাদার ও প্রশিক্ষিত নার্সরূপে ১৮৭৩ সালে বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফর উইম্যান এন্ড চিল্ড্রেন থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন।

বিশ্বের ১ম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে নার্সদেরকে নিবন্ধিত করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯০১ সালে নার্সেস রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট প্রণীত হয়। এলেন ডাফার্টি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম নিবন্ধিত নার্স। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অঙ্গরাজ্যরূপে নর্থ ক্যারোলাইনায় নার্সিং লাইসেন্স ল ১৯০৩ সালে গৃহীত হয়।[২]১৯৯০-এর দশকে নার্সদেরকে ঔষধ দেয়া, ডায়াগনোস্টিকপ্যাথলজি পরীক্ষাসহ রোগীদেরকে প্রয়োজনে অন্য পেশাদারী স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের কাছে স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

250px ১ম বিশ্বযুদ্ধে রেডক্রসের নার্স নিয়োগের বিজ্ঞাপনচিত্র

১৮৭০-এর দশকে নারীরা উত্তর আমেরিকার শহরাঞ্চলের হাসপাতালগুলোয় কর্মরত ছিলেন। সচরাচর তারা প্রশিক্ষণবিহীন, কর্মজীবি শ্রেণী এবং নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে চিকিৎসক ও সমাজ থেকে মূল্যায়িত হতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে গ্রেট ব্রিটেন এবং ইউরোপ মহাদেশেও তাদেরকে একইভাবে মূল্যায়ন করা হতো।[৩]

যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার হাসপাতালের নার্সিং বিদ্যালয়গুলোয় নাইটিঙ্গেল’স মডেল প্রয়োগের জন্য তাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে বলা হয়ঃ[৩]

১৮৮০ এবং ১৮৯০-এর দশকে শ্রেণীকক্ষ এবং চাকুরীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইসাথে প্রত্যাশিত সজ্জ্বা এবং পেশাদারী মনোভাবও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ব্রিটেনে খুবই ক্ষুদ্র পর্যায়ে নারীরা সামরিক বাহিনীতে নার্সরূপে কর্মরত ছিলেন। কুইন আলেকজান্দ্রা’জ ইম্পেরিয়াল মিলিটারী নার্সিং সার্ভিস বা (কিউএআইএমএনএস) এবং প্রিন্সেস ম্যারি’জ রয়েল এয়ার ফোর্সে ১০,৫০০ নার্স নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তারা ১৯০২ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত নিযুক্ত ছিলেন। এছাড়াও রেডক্রসে স্বেচ্ছাসেবী নার্সও নিয়োগ করা হয়।[৪] চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে পদবী সৃষ্টি করা হয়। সেগুলো ছিল – মেট্রন-ইন-চিফপ্রিন্সিপাল মেট্রনসিস্টার এবং স্টাফ নার্স। নারীদেরকে যুদ্ধ চলাকালীন সময়েও চিকিৎসা সেবা প্রদানে নিযুক্ত করা হয়। ১৯১৪ সালে শেষ দিকে কিউএআইএমএনএস-এ নিয়মিত এবং সংরক্ষিত নার্স সদস্য ছিল ২,২২৩জন। যুদ্ধ শেষে দেখা যায় যে সেখানে প্রশিক্ষিত নার্স ছিল ১০,৪০৪জন।[৫]

১ম মহাযুদ্ধে কানাডা থেকে স্বেচ্ছাসেবী নার্স প্রেরণ করা হয়। তারা রয়েল কানাডিয়ান আর্মি কর্তৃক কমিশন্ডপ্রাপ্ত অফিসাররূপে বাইরের দেশে প্রেরীত হয়েছিলেন।[৬]এরফলে তারা কিছু মর্যাদাসম্পন্ন পদবীধারীদের সাথে মিশতে পেরেছিলেন। তালিকাভূক্ত রোগী এবং অধীনস্থরা তাদের নির্দেশনামাফিক চলতেন। কানাডা ছিল প্রথম দেশ যেখান থেকে নারীদেরকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল। গোলাবর্ষণের প্রেক্ষাপটে যুদ্ধের শুরুর দিকে নার্সদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রের সামনে যেতে বারণ করা হয়।

কানাডার নারী স্বেচ্ছাসেবীগণ সামরিক বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় তাদের প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে বিদেশে গমন করেন।[৩] সর্বমোট ৩,১৪১জন কানাডিয়ান নার্সিং সিস্টার কানাডিয়ান আর্মি মেডিক্যাল কোরে সেবা প্রদান করেন। এছাড়াও, বহিঃবিশ্বে – ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ভূ-মধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলীয় গ্যালিপোলি, আলেকজান্দ্রিয়া এবং স্যালোনিকায় তারা নিযুক্ত হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে ৪৬জন কানাডার নার্সিং সিস্টার নিহত হন।[৬]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *