📌মাইগ্রেন কী?
মাইগ্রেন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক শব্দ ἡμικρανία (হেমিক্রানিয়া ) থেকে, যার অর্থ “মাথার একদিকে ব্যথা”। ἡμι- (হেমি-), “অর্ধেক”, এবং κρανίον (ক্রানিয়ন), “খুলি” থেকেই এর সৃষ্টি। মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাথার একদিকে হয় বলে বিখ্যাত হলেও দুদিকেও হতে দেখা গেছে। এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে, সেগুলো মাথাব্যথার শুরুতে স্ফীত হয়ে যায়। মাথাব্যথার সঙ্গে বমি এবং বমি বমি ভাব রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে। যাদের মাইগ্রেন হবার প্রবণতা আছে, তাদের শব্দ, আলো, গন্ধ, বাতাসের চাপের তারতম্য ও কিছু খাবার যেমন চকলেট, আঙুরের রস, পনির ইত্যদির প্রভাবে পুনরায় নতুন করে ভয়ঙ্কর মাথাব্যথা শুরু হতে পারে। ইউরোপীয় অঞ্চলে এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার।
📌কেন এবং কাদের বেশি হয়?
দৃষ্টিস্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথায় অন্য সমস্যার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। মাইগ্রেন একধরনের প্রাইমারি হেডেক, যা নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। চিকিৎসকের অধীনে এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা উচিত। মাইগ্রেনের ব্যথা চোখের কোনো সমস্যার জন্য হয় না।
মাইগ্রেন কেন হয় তা পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হতে পারে। এটি সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয়। নারীদের ঋতুস্রাবের সময় মাথাব্যথা বাড়ে। চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘসময় কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদির কারণে এ রোগ হতে পারে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো এই রোগকে বাড়িয়ে দেয়।
📌লক্ষণ
মাথাব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথা, বমি ভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তিবোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে। মাথার যেকোনো অংশ থেকে এ ব্যথা শুরু হয়। পরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে | চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। শব্দ ও আলো ভালো লাগে না। কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ ও আলোয় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে|
📌যে খাবার মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
* ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার। যেমন ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।
* বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে।
* সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়।
* ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
* আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার জিঞ্চার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
📌কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন❌
* চা, কফি ও কোমলপানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন, টমেটো ও টক জাতীয় ফল খাবেন না।
* গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি
* আপেল, কলা ও চিনাবাদাম
* পেঁয়াজ
তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় একটা ডায়েরি রাখা। যাতে আপনি নোট করে রাখতে পারেন কোন কোন খাবার ও কোন কোন পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ব্যথা বাড়ছে বা কমছে। এ রকম এক সপ্তাহ নোট করলে আপনি নিজেই নিজের সমাধান পেয়ে যাবেন। তবে ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
📌মাইগ্রেন থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু উপায়
* মাইগ্রেন চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক এবং প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
* প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে পরিমিত।
* অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
* কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে।
* উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
* বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা।
* মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।
📌মাইগ্রেনে আক্রান্তরা রোজা রাখতে কী করবেন?
মাইগ্রেনের মাথাব্যথার কারণে ঘরের নীরব আর অন্ধকার কোণায় গিয়ে আশ্রয় খোঁজেননি- মাইগ্রেন আক্রান্ত এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
মাইগ্রেনের ব্যথা তীব্রতর হলে অনেক সময় বমিও করেন অনেকে। সাথে বাড়তি পাওনা থাকে হতাশা আর মুড সুইং।
এ কারণেই যারা মাইগ্রেনে ভোগেন তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে অনেক পরিবর্তন আনেন, খাবার-দাবাড়ের অভ্যাসে পরিবর্তন আনেন, যাতে করে মাইগ্রেন নিয়ে বসবাস কিছুটা সহজ হয়।
অনেকেই নিয়ম করে সকালের নাস্তা করেন কিংবা অনেকেই আবার কফি পানের অভ্যাস গড়ে তোলেন। আবার অনেকেই নিয়মিত ওষুধ খেয়ে থাকেন।
তাই রমজান আসলে অনেকেই কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান যে পরিবর্তিত রুটিনের সাথে কীভাবে তাল মিলিয়ে চলবেন। অনেকেই ব্যথা থেকে বাঁচতে রোজা এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেও বাধ্য হন।
পুষ্টিবিদ ফাতিন আল নাশাশ বলেছেন, ”রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকেই যদি কিছু প্রস্তুতি নেয়া যায় তাহলে রোজার সময় মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।”
নিউরোসার্জন ডা. আহমেদ আল-তামিমি বিবিসি উর্দুকে বলেছেন, ”রমজানের সময় মাইগ্রেনের ব্যথা বেড়ে যাওয়া বা এতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেড়ে যায়। এ কারণে এ সময় রোগীদের খাবার দাবার এবং জীবনযাত্রা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে যাতে করে ব্যথা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়।”
Aishwarja Biswas
Student Advisor, BeBrainer
University Of Rajshahi