মাঙ্কি পক্স- বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের করনীয়

সাম্প্রতিক ছড়িয়ে পড়া ‘মাঙ্কিপক্স’ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। সতর্ক থাকুন

পশু-পাখি থেকে মানুষে সংক্রমন হয় এমন আরেকটি হুমকি হিসেবে এসেছে মাঙ্কিপক্স। স্মলপক্স পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও তার ভাই ব্রাদার হিসেবে মাঙ্কিপক্স রয়ে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত ইঁদুর, কাঠবেড়ালী, বাদর, খরগোশ, কুকুর প্রভৃতি থেকে এই রোগের ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। একজন প্রথম আক্রান্ত মানুষ আরও ৬ জন সুস্থ ব্যক্তিকে সংক্রমিত করতে পারে। আফ্রিকাতে আক্রান্ত প্রতি ১০ জনে ১ জনের মৃত্যু বরনের কথা জানা যায়, এছাড়া কানাডা, আমেরিকা, স্পেন, অস্ট্রেলিয়ার মত দেশগুলোতে এই রোগী সনাক্ত হয়েছে।

🔰এমপক্স (মাঙ্কি পক্স) কি?
মাঙ্কিপক্স একপ্রকার সংক্রামক রোগ। এর উপসর্গ অনেকটা জ্বর বা ফ্লু’র মতো। এমপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট এই সংক্রামক রোগের ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায় দেখা দেয় ফোসকা।

🔰মাঙ্কিপক্স রোগের লক্ষণ:
রোগটির বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। প্রথম পর্যায়ে রোগীর জ্বর আসে, পাশাপশি শরীরে দেখা দেয় ফোসকা ও অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলা।

🔰রূপান্তরিত ধরন :
জানা গেছে, স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটির দু’টি রূপান্তরিত ধরন রয়েছে, ক্ল্যাড- ১ (মধ্য আফ্রিকান) এবং ক্ল্যাড-২ (পশ্চিম আফ্রিকান)। এই রোগে প্রতি ১০০ আক্রান্ত রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয় ৪ জনের।

🔰টিকা বা ওষুধ:
মাঙ্কিপক্স রোগের জন্য এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তবে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, স্মলপক্স বা জলবসন্তের জন্য ব্যবহৃত টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর।

🔰প্রথম শনাক্ত:
মধ্য আফ্রিকার দেশ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এমপক্স এই মহাদেশের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় আরো কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে বুরুন্ডি, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, কেনিয়া, সুইডেন ও পাকিস্তান।

কি টেস্ট করতে হবে?
এখন পর্যন্ত পিসিআর (PCR) টেস্ট করেই রোগ নির্নয় করা যাচ্ছে, যা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে।

🔰প্রতিরোধে করনীয়ঃ
এরই মধ্যে আমরা করোনার মত ভয়াবহ মহামারী সামলাতে পেরেছি, তাই ভয় না পেয়ে সতর্ক হয়ে নির্দেশনা মেনে চলাই নিরাপদ হবে, যেমন –
১। ইতঃমধ্যে সংক্রমিত দেশ থেকে ফেরত ব্যক্তির কোয়ারেন্টাইনে থাকা।
২। কোনো উপসর্গ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নোটিফাই করা।
৩। কোনো গুজবে কান না দেয়া, গুজব না ছড়ানো, বরং বিশ্বাসযোগ্য সংবাদমাধ্যম ফলো করে সঠিক তথ্য জানা।
৪। মাস্ক ব্যবহার করা, হাত ধোয়ার এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের অভ্যাস চালু রাখা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার সকল নিয়মাবলী অভ্যাস করা।
৫। অসুস্থ পশু-পাখির সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা।

🔰বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা:
এমপক্স ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বিশ্বব্যাপী জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, মাঙ্কিপক্স একপ্রকার সংক্রামক রোগ। এর উপসর্গ অনেকটা জ্বর বা ফ্লু’র মতো। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাস থেকেও অন্য কেউ এতে সংক্রমিত হতে পারে।

🔰লক্ষ্মণ দেখা দিলে যোগাযোগের হটলাইন:
এ অবস্থায় পদক্ষেপ হিসেবে হটলাইন চালু করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর। এতে বলা হয়, এমপক্স (মাঙ্কিপক্স) ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। আপনার শরীরে এটির কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে, অথবা সংক্রমিত দেশ ভ্রমণের ২১ দিনের মধ্যে এই লক্ষ্মণ দেখা দিলে ১৬২৬৩, ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights