শিশু-কিশোরদের টিকাদান: গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং সতর্কতা

নবজাতক, শিশু-কিশোরসহ অনেকের বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া জরুরি। তবে কখন কোন টিকা, অসুস্থ থাকা অবস্থায় টিকা দেওয়া যায় কি না, কোনো কারণে তারিখ পেরিয়ে গেলে কী করতে হবে—এসব বিষয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন অনেকেই।

➡️শিশুর জন্মের পর নির্দিষ্ট সময়েই তাকে টিকা দিতে হয়। বাংলাদেশে সরকারিভাবে ইপিআই কর্মসূচির আওতায় শূন্য থেকে দুই বছরের শিশুদের বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া হয়।

➡️প্রায় সব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারেও রয়েছে এ ব্যবস্থা। বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা বেসরকারি সংস্থা, যেমন—মেরি স্টোপস, রাড্ডা, সূর্যের হাসি প্রভৃতি এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

🔰নবজাতকের টিকা
শিশুর জন্মের ১৫ মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় টিকাগুলোর পুরো কোর্স শেষ করতে হয়।
টিকার একটি কার্ড থাকে, যাতে যে টিকা দেওয়া হলো এবং ভবিষ্যতে দেওয়া হবে, তার সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ করা থাকে।
যেসব টিকা এসব কেন্দ্রে দেওয়া হয় সেগুলো হলো—
🔹টাইফয়েড টিকা
শিশুর দুই বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে যেকোনো বয়সে দেওয়া যায়। এই টিকা প্রতি তিন বছর পর পর নিতে হয়। কারণ সারা জীবনের জন্য এই টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে না।
🔹চিকেন পক্স টিকা
এক বছর বয়সের পর যেকোনো বয়সে দেওয়া যায়। একটি ডোজ।

🔰কিশোর-বয়ঃসন্ধিকালে টিকা।
শৈশব পেরিয়ে কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালে যাদের অবস্থান, তাদের রোগ প্রতিরোধ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কিছু টিকাদানের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন-
🔹টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, পারটুসিস (টিডিএপি) : হবু মায়েদের টিটেনাস টিকা নিতে হবে, যেন শিশুর ধনুষ্টঙ্কার না হয়। ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মহিলাদের গর্ভধারণের আগেই পাঁচটি টিটি ডোজ নেওয়া জরুরি।
প্রথমটির এক মাস পরে দ্বিতীয়টি, তারও এক মাস পরে তৃতীয়টি, তার ছয় মাস পরে চতুর্থ ও শেষ ডোজটি তার এক বছর পরে দিতে হয়।
🔹হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) : ৯ বছর বয়স পূর্ণ হলে বালিকা ও কিশোরীদের ভবিষ্যতে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য এই টিকা শুরু করা যায়। এই টিকার তিনটি ডোজ, যা ১১-১২ বছর বয়সে এবং ১২ থেকে ২৬ বছরের সব নারীর নেওয়া উচিত।
🔹মেনিনগোকক্কাল এমসিভি ৪ : সাধারণত ১১-১২ বছর বয়সে এ টিকা নিতে হয়, তবে ১১ থেকে ১৮ বছরের সবাই এ টিকা নিতে পারে। ১৬ বছর বয়সে একটা বুস্টার ডোজ।
🔹ভেরিসেলা : এটি জলবসন্তের টিকা।
🔹ইনফ্লুয়েঞ্জা : প্রতিবছর নিতে হয়।

🔰সতর্কতা
🔹ছোটখাটো অসুস্থতা। যেমন—জ্বর, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি কারণে টিকাদান স্থগিত না করলেও চলে। তবে মারাত্মক অসুস্থ শিশু, খিঁচুনি হচ্ছে এমন শিশু এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল যেমন : কেমোথেরাপি গ্রহণকারী বা এইচআইভি আক্রান্ত শিশুকে টিকা না দেওয়াই উচিত।
🔹যেসব শিশুর স্নায়ুরোগ আছে, তাদের ডিপিটি না দিয়ে ডিটি দেওয়াই ভালো।
🔹 মা যদি এইচআইভি পজিটিভ হয়, তবে নবজাতকের টিকা পিছিয়ে দিতে হবে। যদি শিশুটি এইচআইভি নেগেটিভ শনাক্ত হয়, তবেই শুধু বিসিজি টিকা দেওয়া যাবে।
🔹পূববর্তী কোনো টিকা প্রদানের পর মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে, পরবর্তী টিকা প্রদানের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

📌জেনে রাখা ভালো
🔹একই দিনে একাধিক টিকা দিতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে একই টিকার দুটি ডোজের মধ্যে কমপক্ষে ২৮ দিনের বিরতিতে দিলে ভালো হয়।
🔹কোনো কারণে টিকা প্রদানের তারিখ পার হয়ে গেলে পোলিও, ডিপিটি, হেপাটাইটিস ‘বি’ তারিখের অনেক পরে এমনকি এক বছর পরে দিতেও সমস্যা নেই।
🔹পোলিও টিকা মুখে খেতে হয় বলে ডায়রিয়া থাকলে শিডিউলের ডোজ খাওয়ানোর পর ২৮ দিন বিরতিতে একটি অতিরিক্ত ডোজ খাওয়ানো হয়।
🔹বিসিজি টিকা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে টিকার স্থানে ঘা হওয়ার কথা। এতে ঘাবড়ানোর তেমন কিছু নেই।
🔹সাধারণত ডিপিটি বাঁ ঊরুতে ও হেপাটাইটিস ডান ঊরুতে দেওয়া হয়।
🔹৯ মাস বয়সের আগে হামের মতো র্যাশ হয়ে থাকলেও যথাসময়ে মানে ৯ মাস পূর্ণ হলেই হামের টিকা দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *