এইচএসসি পরীক্ষায় সাধারণ ও মাদ্রাসা বোর্ডে হাজারো শিক্ষার্থী বৃত্তি পেলেও একই ফলাফল থাকা সত্ত্বেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত। বৃত্তি বৈষম্য নিয়ে শিক্ষাবিদদের উদ্বেগ।
চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় দেশের ৯টি জেনারেল শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে হাজারো শিক্ষার্থী মেধা ও সাধারণ বৃত্তি পেলেও একই ধরনের ফলাফল ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা বৃত্তির তালিকার বাইরে রয়ে গেছে। বোর্ডভিত্তিক নীতির কারণে এই বৈষম্য তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের।
জেনারেল ও মাদ্রাসা বোর্ডে বৃত্তির চিত্র
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ ৯টি জেনারেল বোর্ডে সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে
- মেধাবৃত্তি পাচ্ছেন ১,১২৫ জন
- সাধারণ বৃত্তি পাচ্ছেন ৯,৩৭৫ জন
পাশাপাশি ফলাফলের ভিত্তিতে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড-এর অধীন শিক্ষার্থীরাও নির্ধারিত কোটায় বৃত্তি পাচ্ছেন।
মেধাবৃত্তির হার মাসিক ৮২৫ টাকা ও বার্ষিক এককালীন ১,৮০০ টাকা, আর সাধারণ বৃত্তির হার মাসিক ৩৭৫ টাকা ও বার্ষিক ৭৫০ টাকা।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে বিপরীত চিত্র
অন্যদিকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড-এর অধীনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ৫ হাজার ৬১০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৫ জন উত্তীর্ণ হন।
এ বছর কারিগরি বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১,৬১০ জন শিক্ষার্থী, তবুও তারা কেউই বৃত্তির আওতায় আসেননি।
এতে বোর্ডভিত্তিক নীতির কারণে লাখাধিক কারিগরি শিক্ষার্থী কার্যত উপেক্ষিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষাবিদদের প্রতিক্রিয়া
উমর ফারুক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক, বলেন—
“কারিগরি শিক্ষা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি। অথচ একই যোগ্যতা ও ফলাফল থাকা সত্ত্বেও শুধু বোর্ডভিত্তিক বৈষম্যের কারণে কারিগরি শিক্ষার্থীরা বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা ন্যায়ের পরিপন্থী।”
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ
কারিগরি বোর্ডের অধীন জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মুসা ইসলাম বলেন—
“আমরা একই এইচএসসি পরীক্ষা দিই, কিন্তু বৃত্তির ক্ষেত্রে আমাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহও কমে যাচ্ছে।”
বোর্ডের বক্তব্য
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) আনোয়ারুল কবীর বলেন—
“কারিগরি শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করেও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে অষ্টম শ্রেণির জন্য জুনিয়র বৃত্তি চালু করেছি। ভবিষ্যতে এইচএসসি পর্যায়েও সমতাভিত্তিক বৃত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে।”
নীতিগত প্রশ্ন
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সাবেক সচিব কবিরুল ইসলাম বলেন
“নীতিগতভাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরাও এইচএসসি বৃত্তি পাওয়ার যোগ্য। তাদের সঙ্গে বৈষম্য করার কোনো সুযোগ নেই।”
উপসংহার
শিক্ষাবিদদের মতে, টেকসই শিল্পায়ন ও দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। অথচ বৃত্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনায় বৈষম্য থাকলে মেধাবীরা এই ধারায় আগ্রহ হারাবে। তাই অবিলম্বে সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃত্তি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।
➡️ মেডিকেল ভর্তি ও ভর্তি প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত পেতে ভিজিট করুন:
https://www.bebrainer.app/
➡️ সব নোটিশ ও আপডেট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হন:
https://t.me/bebrainernursing