নিউরন – নার্সিং ভর্তি কোচিং


অনেকে মনে করে থাকে নিউরন মানেই কোন না কোন কোচিং। কিন্তু না, নিউরন মূলত আমাদের ব্রেইনের গাঠনিক ও ফাংশনাল একক। এই পোস্টে আমরা নিউরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।


মানুষের স্নায়বিক সমন্বয়ের প্রধান সমন্বয়কারী স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও কার্যকর একককে নিউরন বলে । নিউরনের দুটি প্রধান অংশ হচ্ছে কোষদেহ (cell body) এবং প্রলম্বিত অংশ বা নিউরাইট (neurite)। নিউরাইট দুধরনের অংশ নিয়ে গঠিত : বহু শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট ছোট ছোট প্রলম্বিত অংশ বা ডেনড্রাইট (dendrite) এবং শাখা-প্রশাখাবিহীন দীর্ঘ প্রলম্বিত অংশ বা অ্যাক্সন (axon)।

প্রলম্বিত অংশের বা প্রবর্ধকের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে নিউরন পাঁচ ধরনের :

  • অ্যাপোলার (Apolar) বা মেরুহীন নিউরন : কোষদেহে কোন প্রলম্বিত অংশ থাকে না। সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের বহিঃস্তরে এবং চোখের রেটিনার মধ্যবর্তী নিউক্লিয়ার স্তরে মেরুবিহীন নিউরন পাওয়া যায়।
  • ইউনিপোলার (Unipolar) বা একমেরুযুক্ত নিউরন : কোষদেহ থেকে একটি মাত্র প্রলম্বিত অংশ সৃষ্টি হয় যা পরে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে একটি ডেনড্রাইটে ও অন্যটি অ্যাক্সনে পরিণত হয় । মেরুদন্ডী প্রাণীর প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রে এ নিউরন থাকে। এগুলো প্রধানত সেনসরি (সংবেদী)।
  • বাইপোলার (Bipolar) বা দ্বিমেরুযুক্ত নিউরন : কোষদেহ থেকে সৃষ্ট প্রলম্বিত অংশের সংখ্যা ২টি : একটি ডেনড্রাইট, অন্যটি অ্যাক্সন। মানব ভ্রূণে স্নায়ুতন্ত্রের সব কোষই বাইপোলার। পরবর্তীকালে এগুলো ইউনিপোলার অথবা মাল্টিপোলার নিউরনে পরিণত হয়। রেটিনা, ককলিয়া ও নাকে এ ধরনের নিউরন পাওয়া যায় ।
  • মাল্টিপোলার (Multipolar) বা বহুমেরুযুক্ত নিউরন : কোষদেহ থেকে সৃষ্ট প্রলম্বিত অংশের সংখ্যা ২টি : একটি ডেনড্রাইট, অন্যটি অ্যাক্সন। মানব ভ্রূণে স্নায়ুতন্ত্রের সব কোষই বাইপোলার। পরবর্তীকালে এগুলো ইউনিপোলার অথবা মাল্টিপোলার নিউরনে পরিণত হয়। রেটিনা, ককলিয়া ও নাকে এ ধরনের নিউরন পাওয়া যায় ।
  • সিউডোইউনিপোলার (Pseudounipolar) বা ছদ্ম মেরুযুক্ত : প্রাথমিক অবস্থায় দুটি প্রলম্বিত অংশ থাকে যা সময়ের সাথে সাথে মিলিত হয়ে একটিতে পরিণত হয়। দেখতে ইউনিপোলার হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো বাইপোলার নিউরন থেকে সৃষ্ট। স্পাইনাল গ্যাংলিয়া ও করোটিক স্নায়ু গ্যাংলিয়ায় এ ধরনের নিউরন অবস্থিত।

নিউরোগ্লিয়া (Neuroglia)

নিউরন যে যোজক টিস্যুর ভিতরে সুরক্ষিত থাকে তাকে নিউরোগ্লিয়া বলে।

নিউরোগ্লিয়া চার রকম:

  • অ্যাস্ট্রোসাইটস
  • অলিগোডেনড্রোসাইটস
  • মাইক্রোগ্লিয়া
  • এপেনডাইমা

নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitters)

যে রাসায়নিক পদার্থ সিন্যাপসের মধ্য দিয়ে এক নিউরন থেকে অন্য নিউরন বা পেশি বা গ্রন্থিতে স্নায়ু উদ্দীপনা বহন করে তাকে নিউরোট্রান্সমিটার বলে। এ পদার্থ প্রিসিন্যাপটিক নিউরনের ভেসিকলে জমা থাকে ও প্রয়োজনে সিন্যাপটিক ক্লেফটে মুক্ত হয়। অ্যাসিটাইল কোলিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নিউরোট্রান্সমিটার।

এর প্রকারভেদ নিম্নরূপ:

  • কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter of central nervous system) : ডোপামিন, GABA, গ্লাইসিন, গ্লুটামেট প্রভৃতি।
  • প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter of peripheral nervous system) : অ্যাসিটাইল কোলিন, অ্যাড্রেনালিন, নর অ্যাড্রেনালিন, হিস্টামিন প্রভৃতি।

সিন্যাপস (Synapse)

স্নায়ুতন্ত্র অসংখ্য নিউরনে গঠিত হলেও নিউরনগুলোর মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ পোটোপ্লাজমীয় সংযোগ থাকে না। সাধারণত একটি নিউরনের অ্যাক্সন-প্রান্ত অন্য নিউরনের ডেনড্রাইট-প্রান্তের খুব কাছে অবস্থান করে কিন্তু কেউ কাউকে স্পর্শ করে না। এভাৱে, দুটি স্নায়ুর মধ্যে সূক্ষ্ম ফাঁকযুক্ত সংযোগস্থল যেখানে একটি নিউরনের অ্যাক্সনের প্রান্ত শেষ হয় এবং অন্য একটি নিউরন শুরু হয়, তাকে সিন্যাপস বলে। স্নায়ু উদ্দীপনা সিন্যাপসের মাধ্যমে কেবল একদিকে (এক নিউরনের অ্যাক্সন থেকে অপর নিউরনের ডেনড্রাইট বা কোষদেহে) পরিবাহিত হয়।

সিন্যাপস এর গঠন (Structure of Synapse)  : 

দুটি নিউরনের অংশ মিলিত হয়ে সিন্যাপস গঠন করে। যে নিউরনের অ্যাক্সন সিন্যাপস গঠনে অংশ নেয় তাকে প্রিসিন্যাপটিক নিউরন বলে । সিন্যাপস  গঠনকারী  অন্য  নিউরনটি  পোস্টসিন্যাপটিক  নিউরন। নিউরনের প্রিসিন্যাপটিক ঝিল্লি এবং পোস্টসিন্যাপটিক নিউরনের পোস্টসিন্যাপটিক ঝিল্লি সম্মিলিতভাবে সিন্যাপস গঠন করে। এ দুটি ঝিল্লির মাঝে ২০nm (ন্যানোমিটার) – ৩০nm ফাঁক থাকে। এ ফাঁকটি সিন্যাপটিক ক্লেফট (synaptic cleft) নামে পরিচিত। প্রিসিন্যাপটিক ঝিল্লি প্রকৃতপক্ষে প্রিসিন্যাপটিক নিউরনের অ্যাক্সনের স্ফীত  প্রান্তের অংশ। অ্যাক্সনের স্ফীত প্রান্তকে সিন্যাপটিক নব (synaptic knob) বলে। নবের ভিতরে অসংখ্য মাইটোকন্ড্রিয়া, মাইক্রোফিলামেন্ট ও নিউরোট্রান্সমিটারযুক্ত ভেসিকল থাকে। পোস্টসিন্যাপটিক ঝিল্লি হচ্ছে পোস্টসিন্যাপটিক নিউরনের কোষদেহ বা ডেনড্রাইট বা অ্যাক্সনের অংশ।

Neurone

সিন্যাপস-এর কাজ (Functions of Synapse) :

  • নিউরন থেকে নিউরনে তথ্য স্থানান্তর করে (প্রধান কাজ)।
  • স্নায়ু-উদ্দীপনাকে কেবল একদিকে প্রেরণ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে সাহায্য করে।
  • বিভিন্ন নিউরনের প্রতিসমন্বিত সাড়া দেয়।
  • অতি নিচু মাত্রার উদ্দীপনাকে বাছাই করে বাদ দিয়ে দেয়।
  • প্রচন্ড স্নায়ু-উদ্দীপনায় নিউরোট্রান্সমিটার পদার্থের ক্ষরণ কমিয়ে অতি-উদ্দীপনা প্রবাহে বাধা দেয়, ফলে কার্যকর (effector) অংশ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় ।

সিন্যাপসের মাধ্যমে স্নায়ু উদ্দীপনা পরিবহনের প্রবাহ চিত্র-

স্নায়ু উদ্দীপনাবহিঃকোষীয় তরল থেকে সিন্যাপটিক নবে Ca2+ প্রবেশ  সিন্যাপটিক ভেসিকলনিউরোট্রান্সমিটার পদার্থ (অ্যাসিটাইল কোলিন)
স্নায়ু সংকেত পরিবহনপোস্ট সিন্যাপটিক ঝিল্লিতে নিউরেনাট্রান্সমিটার রিসেপ্টর যৌগ তৈরি। বহিঃকোষীয় তরল থেকে Na+ প্রবেশ এবং K+ বের হয়ে যায়সিন্যাপটিক ক্লেফটপ্রিসিন্যাপটিক ঝিল্লি

স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণিবিন্যাস (Classification of Nervous System) :

সমগ্র স্নায়ুতন্ত্রকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

  1. কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র
  2. প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central nervous system) এটি মস্তিষ্ক (brain) ও সুষুম্নাকাণ্ড (spinal cord) নিয়ে গঠিত।

প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (Peripheral nervous system) : কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কতকগুলো স্নায়ু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হয়ে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এসব জোড় স্নায়ুকে প্রান্তীয় স্নায়ু বলে। প্রান্তীয় স্নায়ুর সমন্বয়ে প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত ।

প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র দুভাগে বিভক্ত:

  1. ঐচ্ছিক স্নায়ুতন্ত্র
  2. স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র

ঐচ্ছিক বা ঐচ্ছিক বা সোমাটিক স্নায়ুতন্ত্র (Voluntary or Somatic nervous system) : এটি ১২ জোড়া করোটিক স্নায়ু ও ৩১ জোড়া সুষুম্না স্নায়ু নিয়ে গঠিত।

স্বয়ংক্রিয় বা আন্তরযন্ত্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Autonomic nervous system) : এগুলো কেন্দ্রীয় ও প্রান্তীয় থেকে সৃষ্টি হয়ে প্রধানত দেহের অনৈচ্ছিক গঠনের সাথে সম্পর্কযুক্ত আন্তরযন্ত্রের (visceral organs) বিভিন্ন কাজ, যেমন- হৃৎস্পন্দন, পেরিস্ট্যালসিস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।

স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দুরকম। যথা-

১. সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র (Sympathetic nervous system)

২. প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র (Parasympathetic nervous system)

Autonomic nervous system

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central Nervous System-CNS) :

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক (brain) ও সুষুম্নাকাণ্ড (spinal cord) নিয়ে গঠিত । ভ্রূণের এক্টোডার্মের কুঞ্চনের মাধ্যমে বিকাশ   লাভ করে। নটোকর্ড ̶ যা থেকে মেরুদণ্ড সৃষ্টি হয় ঠিক তার উপরে স্নায়ুতন্ত্রের অবস্থান এক্টোডার্ম ভিতরের দিকে ভাঁজ খেয়ে একটি ফাপা নিউরাল টিউব (neural tube) দেহের দৈর্ঘ্য বরাবর প্রসারিত হয়। নিউরাল টিউব ভ্রূনীয় বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে একটি স্ফীতাকার মস্তিষ্ক (অগ্রভাগে) এবং একটি লম্বা দণ্ডাকার সুষুম্না কাণ্ড গঠন করে।

Central Nervous System-CNS

সম্মুখ নিউরাল নালির স্যুরা ম্যাটার অভ্যন্তরে মস্তিষ্কের ৩টি ভ্রূণীয় অঞ্চল দেখা যায়। এগুলো পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে যথাক্রমে অগ্রমস্তিষ্ক, মধ্যমস্তিষ্ক ও পশ্চাত্মস্তিষ্ক গঠন করে। সমগ্র মস্তিষ্ক ও সুষুমাকাণ্ড একটি দৃঢ় ও মজবুত আবরণে আবৃত থাকে। একে মেনিনজেস (meninges) বলে । মেনিনজেস ৩টি তন্তুময় ঝিল্লি নিয়ে গঠিত। যথা- বাইরের স্যুরা ম্যাটার, মধ্যবর্তী অ্যারানয়েড ম্যাটার এবং ভিতরের পায়া ম্যাটার।

মেনিনজাইটিস কী? (What is meningitis?)

মেনিনজেসের প্রদাহজনিত রোগকে মেনিনজাইটিস (meningitis) বলে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোন জীবাণু দ্বারা মেনিনজেস সংক্রমিত হলে প্রদাহের সৃষ্টি হয় । Neisseria meningitidis নামক ব্যাকটেরিয়া জীবাণুতে মেনিনজেস সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় মেনিনজাইটিসের প্রধান লক্ষণ হলো মাথা ব্যথা ও গ্রীবা শিথিল হয়ে যাওয়া। এছাড়া মনোযোগে বিঘ্নতা, বমিভাব, আলো ও শব্দ সহনহীনতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।

Related Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *