ভাষা অনেকটা নদীর মতো, সদা পরিবর্তনশীল। ভাষা বিবর্তিত হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, মুখ থেকে মুখে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একেক ভাষায় যুক্ত হয় নতুন নতুন শব্দ, বদলে যায় উচ্চারণ এবং এর প্রয়োগ। সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুবাদে এই জেনারেশন বা প্রজন্ম ধারা নিয়ে খুব চর্চা চলছে। বর্তমান তরুণ সমাজ অর্থাৎ জেন–জি এর (জেনারেশন জেড বা জুমারস, যাঁদের বয়স ১১ থেকে ২৬, অর্থাৎ ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যাঁদের জন্ম) শব্দভান্ডারেও এসেছে পরিবর্তন। নিত্যদিনের কথোপকথন, লেখা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁরা এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করছেন, যার অর্থ পুরনো প্রজন্মের পক্ষে বোঝা মুশকিল! তবে জেন–জি এর মানুষদের বুঝতে চাইলে তাঁদের শব্দগুলোও তো বোঝা চাই। তাই জেনে রাখুন জেন–জি এর মুখে মুখে ফেরা কিছু শব্দের অর্থ।
অরা (Aura) – ব্যক্তিত্বের পরিমাপক : একজন কতটা ‘কুল’ বা ইতিবাচক কিংবা কতটা ‘আনকুল’ বা নেতিবাচক, তা পরিমাপ করা হয় এই শব্দ দিয়ে। ‘অরা গেইন’ ব্যবহৃত হয় ইতিবাচক অর্থে এবং ‘অরা লস’ নেতিবাচক অর্থে। উদাহরণ: ও কি কাজটা করে অরা লস করলো না?
বেইজড (Based) – প্রকৃত অর্থে অন্যে কীভাবে দেখল, তা তোয়াক্কা না করে নিজের অবস্থানে অবিচল থাকা : তবে শব্দটি এখন ব্যবহৃত হয় কোনো মতামত বা কোনো কিছুতে একমত পোষণ করার ক্ষেত্রে। বিশেষত যেকোনো বিতর্কিত বিষয়ের বেলায় শব্দটি জুতসই। উদাহরণ: তোমার মতামত বেইজড।
ব্রোহ্ (Broh) – শব্দটি ব্যবহার করা হয় কারও কিংবা কোনো কিছুর প্রতি শক, হতাশা কিংবা বিব্রতবোধ বোঝাতে : এটি মূলত ইংরেজি ‘ব্রাদার’ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। উদাহরণ: এইটা কী করলা, ব্রোহ!
বাসিন (Bussin) – খুব ভালো : কোনো কিছুকে খুব ভালো বোঝাতে বলা হয় ‘বাসিন’। রান্নার প্রশংসা করতেও শব্দটির চল আছে। উদাহরণ: সালাদটা যা হয়েছে না! বাসিন!
ক্যাপ (Cap) – মিথ্যা : কেউ মিথ্যা বলছে, তা ধরতে পারলে ক্যাপ/ক্যাপিং বলে তাকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। সত্য বোঝাতে ব্যবহার করা হয় এর উল্টো, অর্থাৎ ‘নো ক্যাপ’। শব্দটির উৎপত্তি ১৯০৬ সালে প্রকাশিত মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক আলফ্রেড হেনরি লুইসের ‘Confessions of a Detective’ বইয়ে। ২০১৭ সালে এটি জনপ্রিয়তা পায়। উদাহরণ: ১. কনসার্টের টিকিট তো ঠিকই পাইছিস, ইউ আর ক্যাপিং! ২. আজকের মধ্যে কাজটা শেষ করবই। নো ক্যাপ!
কুক (Cook) – কোনো ফলাফলের অভিপ্রায়ে এমন কিছু করা, যাতে অন্য পক্ষ বিব্রত বা অস্বস্তিবোধ করে : পরিচিত বাক্য ‘লেট হিম কুক’। অর্থাৎ সে এমন কিছু করুক, পরে যাতে বিব্রত বোধ করে। উদাহরণ: অপেক্ষা করো, দেখি কী করে। লেট হিম কুক।
ডেলুলু (Delulu) – ইংরেজি ‘ডিলিউশনাল’ শব্দটির বিবর্তিত রূপ : উৎপত্তি মূলত কে–পপ সংস্কৃতি থেকে। শব্দটি ব্যবহার করা হয় অসম্ভব বা আকাশকুসুম মনোভাব বোঝাতে। বিশেষত কোনো সম্পর্কের বেলায় কারও আকাশকুসুম প্রত্যাশাকে বলে ডেলুলু। শব্দটি জনপ্রিয় হয়েছে টিকটকে ‘ডেলুলু ইজ দ্য সোলুলু’ বাক্যাংশটি ভাইরাল হওয়ার পর। বাক্যাংশটির অর্থ ‘আত্মবিশ্বাসেই সব সমাধান’। এখানে ‘সোলুলু’ এসেছে ইংরেজি ‘সলিউশন’ শব্দ থেকে। উদাহরণ: ইউ আর সো ডেলুলু।
ড্রিপ (Drip) – ট্রেন্ডি এবং উচ্চশ্রেণির ফ্যাশন বোঝাতে : ‘কুল’ শব্দের বিকল্প হিসেবেও ড্রিপ ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: কুল ড্রিপ! কোত্থেকে কিনেছো এটা?
এরা (Era) – কোনো ব্যক্তির আগ্রহ বা অগ্রাধিকার বোঝাতে : ধরা যাক, কেউ স্বাস্থ্যসচেতন হয়েছেন, তখন তিনি নিজেকে নিজের ফিটনেস এরায় আছেন বলে দাবি করতে পারেন। উদাহরণ: সাবধান! আমি কিন্তু এখন আমার ভিলেন এরায় আছি।
ফ্লেক্স (Flex) – সোজা বাংলায় ভাব দেখানো : ভাব দেখানো হতে পারে যেকোনো বিষয়ে। হতে পারে নিজের অর্জন, গুণ কিংবা প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে। উদাহরণ: ফ্লেক্স করছি না, এবার টেস্টে ৯৮ পেয়েছি!
গ্লো আপ (Glow-Up) – বিশেষ উন্নতি অর্থে : কারও বড় কোনো উন্নতি দেখলে সেটিকে ইঙ্গিত করে ‘গ্লো আপ’ ব্যবহৃত হয়। সেই উন্নতি হতে পারে পোশাক–পরিচ্ছদ, আত্মবিশ্বাস কিংবা স্টাইলে। এর উল্টো হলে ব্যবহার করা হয় ‘গ্লো ডাউন’। উদাহরণ: ওদের গ্লো–আপে তো আমি মুগ্ধ!
গোট (GOAT) – এটি মূলত ‘গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ (Greatest of all Time)–এর সংক্ষিপ্ত রূপ : বাংলায় যাকে বলে ‘সর্বকালের সেরা’। উদাহরণ: কী বললা? রোনালদো? ভাই, যত যা–ই বলো, মেসিই কিন্তু গোট!
আই ওয়াই কে ওয়াই কে (Iykyk) – এটি ‘ইফ ইউ নো, ইউ নো’ (If you know, you know)–এর সংক্ষিপ্ত রূপ : কোনো একটি বিষয়ে কেউ আগে থেকে অবগত থাকলে শব্দটি ব্যবহার করে তার ইঙ্গিত দেয়। ধরা যাক, বন্ধুকে আপনি এমন একটি মিম পাঠালেন, যেটি সরাসরি কিছু না বললেও বিশেষ কিছুর অর্থ প্রকাশ করে, যা আপনি জানেন। সে ক্ষেত্রে লিখতে পারেন Iykyk। উদাহরণ: ঠিক এটা বলছি না, তবে… Iykyk!
লিট (Lit) ইতিবাচক, মজার, বিস্ময়কর, দারুণ, চমৎকার বা ‘কুল’ অর্থে : এখন ‘কুল’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয় লিট। উদাহরণ: আজকের পার্টিটা লিট ছিল!
ওকে বুমার – OK Boomer : ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে যাঁদের জন্ম, তাঁদের বলা হয় ‘বেবি বুমার্স’ বা ‘বুমার্স’ প্রজন্ম। এই প্রজন্মের গোঁড়া মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোকে বলে ‘ওকে বুমার’। বুমার প্রজন্মের কেউ যদি বদ্ধমূল ভুল ধারণা নিয়ে বসে থাকেন, তখন সেসব ধারণাকে পাত্তা না দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো অর্থে এই শব্দ ব্যবহার করে জেন–জি! উদাহরণ: আপনার ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টা ভুয়া? ওকে বুমার!
পুকি – Pookie : আদর করে পছন্দের মানুষ, বিশেষত বন্ধু ও ভালোবাসার মানুষকে ডাকা হয় ‘পুকি’। উদাহরণ: হ্যালো, মাই পুকি!
রেড ফ্ল্যাগ (Red flag) – সম্পর্কের বেলায় কারও ব্যাপারে বিপদসংকেত : আসন্ন বিপদ বোঝাতে লাল পতাকার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই। তেমনই সম্পর্কের বেলায় কারও ব্যবহারে বা কাজে যদি বিপদ বা ক্ষতির আভাস পাওয়া যায়, তাকে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হিসেবে গণ্য করা হয়। উদাহরণ: ওর ব্যাপারে রেড ফ্ল্যাগগুলো আমার চোখেই পড়ল না!
রিজ (Rizz) – ইংরেজি ‘কারিজমা’ শব্দটি থেকে এসেছে ‘রিজ’ : বাংলায় যেটা কারিশমা বা আকর্ষণী শক্তি কিংবা মাধুর্য। কারও কথা, চলনবলন বা ব্যক্তিত্ব কতটা আকর্ষণীয়, তা বোঝানো হয় ‘রিজ’ দিয়ে। উদাহরণ: He has all the rizz।
সিম্প (Simp) – কারও প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল হয়ে পড়া : বিশেষ করে কোনো নারীর প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল হয়ে পড়াকে বলে সিম্প। উদাহরণ: ওই মেয়ের জন্য এত সিম্পিং বাদ দে তো! ও তো তোরে চেনেই না!
স্কিবিডি (Skibidi) – অতিরঞ্জিত কোনো কিছু কিংবা হাস্যকর : ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি অর্থেই ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: গানটা পুরাই স্কিবিডি।
সাস (Sus) – সন্দেহজনক : ইংরেজি ‘সাসপেক্ট’ এবং ‘সাসপিশিয়াস’ শব্দ দুটির সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি দিয়ে কোনো বিষয়ে বা কারও ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। উদাহরণ: তোকে কিন্তু সাস লাগতেছে! ঘটনা কী?
টি (Tea) – পরচর্চা করা : নির্দিষ্ট কারও কিংবা কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা কিংবা পরচর্চা করা। মূলত চা খেতে খেতে আলোচনা থেকে ‘টি’ শব্দের এমন ব্যবহার শুরু। উদাহরণ: সো, হোয়াটস দ্য টি?
এরকম আরও কিছু শব্দ!!!
১. টিওয়াইএসএম (TYSM): থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।
২. বিটিডব্লিউ (BTW): বাই দ্য ওয়ে। এক প্রসঙ্গ থেকে আরেক প্রসঙ্গে যেতে আপনি বাক্যের শুরুতে ব্যবহার করতে পারেন।
৩. এলএমকে (LMK): লেট মি নো। মানে, আমাকে জানিয়ো। তুমি কখন যেতে চাও আমাকে জানিয়ো – LMK when you want to go।
৪. আইএলওয়াই (ILY): আইএলওয়াই হচ্ছে আই লাভ ইউ! এর সঙ্গে কিন্তু কয়েকটা হার্ট ইমোজি না দিলেই নয়!!
৫. ওএমডব্লিউ (OMW): অন মাই ওয়ে। আমি রাস্তায়, শিগগিরই তোমার সঙ্গে দেখা হচ্ছে বা তুমি চিন্তা করো না আমি আসছি—এমন সব ক্ষেত্রে লিখতে পারেন ওএমডব্লিউ।
৬. এনভিএম (NVM): নেভার মাইন্ড। মনে করুন, কথোপকথনের ভেতরে আপনি লিখেছেন, গত সপ্তাহে আমরা যেন কোথায় গিয়েছিলাম? পাঁচ মিনিট পর আপনি নিজেই আবার লিখলেন, NVM I find it।
৭. আইআরএল (IRL): আইআরএল–এর পূর্ণরূপ হলো ইন রিয়েল লাইফ। I would love to see you IRL।
৮. ইটিএ (ETA): এর পূর্ণরূপ হলো Estimated Time of Arrival। আপনি হয়তো কারও জন্য অপেক্ষা করছেন। সে কখন আসবে জানতে লিখুন, ETA।
৯. টিএমআই (TMI): Too much information। আপনি হয়তো কোনো একটা বিষয় সম্পর্কে অনেক বেশি বলে ফেলেছেন। তখন সেটাকে জাস্টিফাই করতে লিখলেন, TMI, কিন্তু এই সম্পর্কে তোমার আসলে জানা উচিত।
১০. ওয়াইএনকে (YNK): You never know। বন্ধু বা কাউকে কোনো বিষয়ে উৎসাহিত করতে YNK লিখতে পারেন। যেমন YNK, এই জবটা না পাওয়ায় হয়তো ভালোই হয়েছে। তোমার জন্য আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
— Nurani Bashir Oma
College of Nursing, Sher-E-Bangla Nagar, Dhaka (BSc in Nursing)
Senior Student Advisor, BeBrainer.
📲 আমাদের সাথে যোগাযোগের নাম্বার ও লিংকঃ
📲 FB Message URL: http://m.me/107474017326176
📞 Telegram: https://t.me/bebrainerltd
🎥 Whatsapp: https://wa.me/+8801796636922
📞 অফিস নাম্বারঃ 01796636922 / 01312296333 / 01988054815 / 01984808099
📲 Website: https://www.bebrainer.app/🎥 Android App: https://play.google.com/store/search?q=bebrainer&c=apps